ডেটিং অ্যাপগুলির বিজ্ঞাপন দেখে মনে হয় যে তারা আমাদের সঙ্গী খুঁজে পেতে সাহায্য করতে চায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই অ্যাপগুলি আসলে আমাদের আবেগের সুযোগ নিয়ে অর্থ উপার্জনের ফাঁদ তৈরি করেছে। আমরা যখনই অ্যাপগুলোতে সোয়াইপ করি, মনে হয় যেন আরও কিছু পাওয়ার জন্য ফিরে যেতে চাই, এবং এটাকে সহজ কথায় নেশা বলা যায়।
টিন্ডার এবং হিঞ্জ-এর মতো জনপ্রিয় অ্যাপগুলির মালিক কোম্পানি, ম্যাচ গ্রুপ, এর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে তারা ইচ্ছাকৃতভাবে অ্যাপগুলো এমনভাবে ডিজাইন করেছে যাতে ব্যবহারকারীরা আসক্ত হয়ে পড়ে এবং অর্থ খরচ করতে বাধ্য হয়। একটি মামলায় দাবি করা হয়েছে যে তারা অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও লুকানো অ্যালগরিদম ব্যবহার করে অ্যাপগুলোকে গেমের মতো করে তৈরি করেছে, যাতে গ্রাহকদের লাভের চেয়ে কর্পোরেট লাভকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়।
অনেকেই হয়তো মনে করতে পারেন, একসময় ডেটিং অ্যাপ ফ্রি ছিল। কিন্তু এখন প্রোফাইল উন্নত করতে বা অতিরিক্ত ফিচার ব্যবহার করতে মোটা টাকা দিতে হয়। এসব অর্থ আদৌ আমাদের লাভ করছে কিনা, তাও আমরা নিশ্চিত নই। যেমন লুক ব্রুনিং বলেছেন, “আমরা অনেক অর্থ খরচ করি এই আশায় যে আমাদের প্রোফাইল আরও বেশি দেখা হবে। কিন্তু এর কার্যকারিতা নিয়ে নিশ্চিত কোনো তথ্য আমাদের কাছে নেই।”
টিন্ডারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জোনাথন ব্যাদিন স্বীকার করেছেন যে অ্যাপটি এমনভাবে তৈরি যাতে এটি স্লট মেশিনের মতো কাজ করে, যেখানে মানুষ পুরস্কৃত হবে এই আশায় বারবার চেষ্টা করে। প্রায়ই অপ্রত্যাশিত কিন্তু ঘনঘন পুরস্কার দেয়ার কৌশল তাদের আসক্ত করে রাখে।
ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্যারোলিনা ব্যান্ডিনেলি “প্রিমিয়াম সাবস্ক্রিপশন” ফিচারটিকে এক ধরনের প্রতারণা বলে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, এই সাবস্ক্রিপশন হল মানুষের হতাশাকে কাজে লাগিয়ে আর্থিক শোষণ করার কৌশল। যদি এই অ্যাপগুলো সত্যিই কাজ করতো, তবে তারা এত আয় করতে পারতো না, কারণ মানুষ আর তাদের ব্যবহার করার প্রয়োজন বোধ করতো না।
ডেটিং অ্যাপগুলির মূল লক্ষ্য তাই একটাই – লাভ বাড়ানো। প্রেম নয়, আসলে তারা আপনার পকেটেই নজর রাখছে।
সোর্স: ভাইস